এই শিকড় উপড়ে ফেলার নয়
-মো: শাহজাহান
৩০মে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবোক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউসে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রের নীল নকশার অংশ অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তা কর্তৃক তিনি এক নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন।
৭১-এ যে আকাঙ্খা নিয়ে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছেন এবং নিজে সম্মুখ সমরে লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করেছেন পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার সেই আকাঙ্খা সমূহ ভেঙ্গে চুরমার হতে লাগল। দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে একদলীয় বাকশালী শাসন ব্যবস্থা কায়েম, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ, ৪টি ছাড়া সব কয়টি পত্রিকা বন্ধ ঘোষণা, রক্ষীবাহিনী গঠন, প্রশাসনের সকল স্তরে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ সকল ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ায় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে এবং দেশে রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট তৈরী হয়। এরই অবস্থা ছিল অনাকাঙ্খিত-অনভিপ্রেত। তবে এ সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। লক্ষ্যনীয় যে, তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী ও শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা খন্দকার মুশতাক আহমেদ এই রক্তাক্ত ঘটনার সুবিধাভোগী হয়ে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। বেশ কিছুদিন দেশে রাজনৈতিক ও সামরিক বাহিনীতে চরম অস্থিরতা দেখা যায়। সেনানিবাসে জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। পরবর্তীতে সিপাহী-জনতা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে আনেন। স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী দু:শাসনের শিকার কোটি কোটি মানুষের স্বত:স্ফূত আহ্বানে এবং বৃহত্তর দেশ মাতৃকার কল্যাণে, দেশের ক্রান্তিকালে ৭১ এর ন্যায় জাতির ত্রাণকর্তা হিসাবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে দেশ-জাতি ও জনমনে স্বস্তি ও শান্তি ফিরে এসেছিল। এর পরের ইতিহাস আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার ইতিহাস।
জিয়াউর রহমান তার তীক্ষ্ণ মেধা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের ভেঙ্গে পড়া শাসন ব্যবস্থাকে পূর্ণবিন্যাস করেন এবং দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করেন, গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন। সমমর্যাদার ভিত্তিতে ‘ কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব’ এই নীতি অবলম্বন করে সকলের সঙ্গে সু-সম্পর্ক স্থাপন করেন। তাঁর দুরদর্শী পররাষ্ট্রনীতির কারণে দ্রুততম সময়ে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি নিজস্ব ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জনে সক্ষম হয়। যার উৎকৃষ্ট নজির দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট ‘সার্ক’ গঠন।
জিয়াউর রহমানের রাজনীতির মূল দর্শন ছিল ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’। রাষ্ট্র পরিচালনায় তার গৃহীত ১৯ দফা কর্মসূচি দেশের মানুষকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। ব্যক্তি জিয়ার সততা, আদর্শ, যোগ্যতা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং সিন্ধান্ত গ্রহণের বিচক্ষনতা, ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা, সর্বোপরি স্ব-নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার তীব্র আকাঙ্খা তাঁর নেতৃত্বকে প্রশ্নাতীতভাবে সমৃদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল। তাঁর ব্যক্তি চরিত্রের উপর্যুক্ত গুণাবলী, মানুষকে প্রভাবিত করার মত চমৎকার সম্মোহনী শক্তি এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর যুগোপযোগী নীতি ও কর্মসূচির কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে খুব অল্প সময়ে তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক ও দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভে সক্ষম হন। জিয়াউর রহমান উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে স্ব-নির্ভর জাতি হিসেবে গড়ে তোলার সংগ্রামে আত্ননিয়োগ করেন। দেশের ক্রমবিকাশমান ও দ্রুত বর্ধনশীল অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি স্বার্থান্বেষী মহল মেনে নিতে পারেনি, এই ঈর্ষান্বিত কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৮১ সালের ৩০ মে তাঁকে শাহাদাৎ বরন করতে হয়।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যু সংবাদে সমগ্র বাংলাদেশ থমকে যায়, সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জিয়ার জানাযায় লক্ষ লক্ষ জনতার অংশ গ্রহণ তাঁর গগণচুম্বী জনপ্রিয়তারই বহি:প্রকাশ। জনতার ঢেউ দেখে সেদিন হত্যাকারীরাও ঘাবড়ে গিয়েছিল, তাই তারা তাৎক্ষণিক ক্ষমতা দখলের সাহস পায়নি। তবে ষড়যন্ত্রও থেমে থাকেনি। জিয়ার মৃত্যুর পর তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালের ২৪মার্চ জেনারেল এরশাদ সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং বিএনপিতে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে সিনিয়র ও মধ্যম সারির কয়েকজন নেতাকে তার দলে নেন।
নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সনের ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ জিয়ার সুযোগ্য স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে বিএনপির হাল ধরেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ ও আপোষহীন নেতৃত্বের কারণে দলের ভিতরে ও বাহিরেও জিয়াউর রহমানের মত জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হন। দীর্ঘ নয় বছর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে ১৯৯১ সালে এদেশের জনগণ আবারো বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অসীন করেন। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে আরো দুইবার প্রত্যক্ষ ভেটের মাধ্যমে এদেশের মানুষ বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন করে। বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক পরিচর্যায় শহীদ জিয়ার রোপিত ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ নামক চারাগাছটি ক্রমান্বয়ে সুবিশাল বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সকল চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ দেশের নিরষ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ট গণমানুষের দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন মানুষের মনেকে এমনভাবে প্রেথিত হয়েছে যে, বিভিন্ন সময়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার বহুমুখী অপকৌশল চলানো হলেও তা বারবার বুমেরাং হয়েছে।
২০০৭ সালের ১/১১ তে আবার বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়। ষড়যন্ত্রেও অংশ হিসাবে দেশে নির্বাচন বন্ধ করে সেনা সমর্থিত সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারারুদ্ধ করা হয়। বর্তমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গ্রেফতার তাঁর উপর অমানুষিক নির্যতন করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করা হয়। দলের নেতাদেরও বিরাট অংশ ভয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং কেউ কেউ ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মেলায়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি আবার ২০০৮ সালে দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুসংগঠিত হয় এবং ১/১১ কঠিন ধ