গল্পঃ বোনের স্মৃতি
আপু সারাদিন টিভিতে কি দেখো?
রিমোট দাও এবার আমি একটু
কার্টুন দেখবো।
--ঐ তোর কিসের টিভি আব্বু তোকে
লেপটপ, ফোন দিয়েছে। যাহ
এগুলা চালা গিয়ে..আমি একটু নাটক
দেখি।
--ঐ তাড়াতাড়ি দাও বলছি নাহলে?
--না হলে কি? নাহলে কি করবি?
--নাহলে তোমাকে! এবার আপুকে
আলতো করে একটা ঘুষি মেরে চলে
আসলাম।
--আশ্চর্যের বিষয় হলো আপূ আমার ঘুষি
খেয়ে আবার হাসিমুখে টিভি
দেখছে। যেনো আমার উপর কোনো
রাগই নেই।
একদিন,
--আম্মু আমাকে কিছু টাকা দাও তো..
--আমার কাছে এখন টাকা নাই (আম্মু)
--আপু আমাকে বিশ টাকা দাও তো।
--কেনো তুই টাকা দিয়ে তুই কি করবি?
--কেনো মানুষ টাকা দিয়ে কি করে?
--টাকা দিয়ে মানুষ অনেক কিছু করে
এখন তুই কি করবি?
--এইতো মোবাইলে রিচার্জ করবো।
--না আমি দিবো না তুই কালকে
আমাকে মেরেছিলি।
--আচ্ছা আর মারবো না দাও এবার।
--না কক্ষনো দিবো না।
--দিবে না তো?
--না।
--আচ্ছা তোমার টাকা লাগবে না
আমার বলে বিছানায় এসে শুয়ে
পড়লাম।
--একটু পর আপু এসে আমাকে একশ টাকা
দিলো
--আপু চেয়েছিলাম বিশ টাকা আর
দিয়েছো একশ টাকা! উফফ অনেকদিন
ধরে ফুচকা খাইনা আজকে খাবো
ভালো করে।
--ওই তোকে ফুচকার জন্য কে টাকা
দিয়েছে?
--কেনো তুমিইতো তো দিয়েছো?
--ইশশ শখ কত। শোন বিশ টাকা তোর
মোবাইলে আর আশি টাকা আমার
নাম্বারে দিবি...
--পারবো না। আমি ফুচকা খাব আজ।
--তাহলে আর দিব না।
আমি বললাম দিবো না। যদিও বলি
কিন্তু আপু ঠিকই জানে যে আমি
দিয়ে দিবো।
--দোকান থেকে এসে দেখি আপু
আমার জন্য ফুচকা রান্না করতেছে।
বছরখানেক আগে আমি স্কুল থেকে
ফিরলাম,
তখনি আম্মুর কড়া প্রশ্ন! অংকতে কতো
পেয়েছিস?
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ত্রিশ।
--সেদিন আম্মু আমাকে অনেক
মেরেছিলেন। কিন্তু পরে আপু এসে
আমাকে অনেক কষ্টে নিয়ে
গিয়েছিলেন। তারপর শরীরে ঔষুধ
মেখে দিয়েছিলেন এবংকি ভালো
হওয়ার জন্য তেল দিয়ে মালিশ করে
দিয়েছিলেন।
আর নিজে না ঘুমিয়ে আমাকে রাতে
গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে
দিয়েছিলেন।
•
আপুর বিয়ের আগের দিন,
--আমি তো চলে যাচ্ছি তোর খারাপ
লাগবে না?
--কিসের খারাপ? আমি তো আরও
আনন্দে থাকব।আরামে টিভি
দেখবো। কেউ আর বাধা দিবে না।
তোমার রুম টাও আমার দখলে থাকবে।
উক্ত কথাটি আপুকে বলে যখন বিয়ের
অনুষ্ঠানের নিকটে অগ্রসর হচ্ছিলাম তখন
পিছন ফিরে দেখি আপু আমার দিকে
ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন।
একদৌড়ে গিয়ে আপুকে জড়িয়ে
ধরলাম। আর আপুর কোলে মাথা রেখে
উচ্চস্বরে কাদঁতে থাকলাম।
কিন্তু আপু আমাকে কোনো স্বান্তনা
দিলেন না। বরং নিজেই ঢুকরে ঢুকরে
কেদেঁ উঠলেন।
আর বলে উঠলেন, অলিন তুই আমার
কলিজা টুকরো রে, তোকে ছাড়া
আমি থাকতে পারবো না রে, তুই
আমার ভালবাসার একমাত্র স্মৃতি, আমি
আমার এই স্মৃতিটাকে সবসময় চাই রে।
উত্তরে আমি বলেছিলাম, ধূর পাগলি
আমি তোমার-ই ভাই ছিলাম,তোমার-ই
আছি, এবং তোমার-ই সোনামানিক
ভাই হিসেবে থাকবো।
আপু বলেছিলেন, আমাকে কিন্তু তোর
সবসময় দেখতে যেতে হবে।
আমি তখন তোকে খুব করে জড়িয়ে
ধরবো তোকে। আর অনীহা মিটানোর
জন্য তোকে দুচোখ ভরে দেখবো।
উত্তরে আমি খুব করে হাসলাম আর আপু
আমার দুষ্টু হাসি দেখে গাল টিপে
দিয়েছিলেন।
সেদিন আপু চলে যাওয়ার সময় আমাকেই
জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষন কেদেঁছিলেন
আর রেখে গিয়েছেন তার ভালবাসার
স্মৃতিটাকে।
আর যাওয়ার সময় বলেছেন তার
স্মৃতিটাকে যেনো সবসময় সতেজ এবং
ভালো রাখি।
বিয়ের পর সবসময় এই আমি আপুর কাছে
চলে যেতাম আর আপু তার মায়ায় ভরা
দুচোখ দিয়ে আমাকে দেখতো আর
কান্না করতো।
--সত্যিই আজ আমি আমার আপুকে ছাড়া
কিভাবে আছি তা আমি নিজেই
জানি না।
প্রতিদিন প্রায় হাজারবার বলি, মা
আপু আসবে কখন?
উত্তরে মা বলতো,
কিরে এতদিন তো অনেক
জ্বালিয়েছিস এখন তোর আপু
আসার জন্য চিৎকার করতেছো?
তখন আমি কি আর বলবো? এর উত্তর তো
আমার কাছে জানা নেই। তবুও আমার
জোরে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে
করছে,
"আপু তোকে খুব ভালোবাসি রে
তোকে ভালোবাসি বলেই তোকে
এতো যন্ত্রনা দিতাম
কিন্তু তোর এই ছোট্ট ভাইটাকে
বিশ্বাস কর,
তোকে খুব বেশি ভালবাসি রে।
তোকে খুব মিস করছি
তুই ছাড়া আমি শূন্য"
আপু।একবার দেখে যা তোর দুষ্টু ভাইটা
আর আগের মতো নেই রে। প্রতিটা
মূহূর্তে তোর ভালবাসা পাওয়ার জন্য
ব্যাকুল হয়ে থাকে।
কথাগুলো বলে অনেক কান্নাকাটি
করেছিলাম। কিন্তু যখন এই অনুধাবন
করলাম,
"সব মেয়েকেই তো একদিন না
একদিন অন্যের বাড়ি যেতে হবে"
ঠিক তখনি আমার কান্নাগুলো কোথায়
যেনো হারিয়ে গেলো। তখন থেকে
না কেদেঁ শুধু সৃষ্টিকর্তার প্রতি একটাই
প্রার্থনা করতাম, আমার বোনটা যেনো
ভাল থাকে। জীবন সংসারে যেনো
সে এগিয়ে থাকে। আর আমি বোনের
গচ্ছিত রাখা স্মৃতিটার দিকে মনযোগ
দিলাম।
সমাপ্ত