এবার অলিম্পিকে, একটা দল আছে যাদের কাছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন বহন করার মতো কোনও পতাকা ছিল না
পতাকা নেই মানে তাদের কোনও দেশ নেই... তারা বিভিন্ন দেশ থেকে জড়ো হওয়া রিফিউজি
শেষে এদের নাম দেয়া হয়েছে “অলিম্পিক দল”
উদ্বোধনি প্যারেডে তারা অলিম্পিকের পতাকা নিয়ে হেঁটেছে
হানাহানির এই বিশ্বে, এটা একটা বিরল উদাহরণ
যখন সব দেশ রিফিউজিদের তাড়িয়ে দিচ্ছে, তখন এরাই একটা নিজস্ব পতাকা গঠন করে ফেলেছে
প্রবলেমটা হয়ে গেছে গতকাল... তাদের একজন শুটিং এ সোনা জিতে ফেলেছে
অন্য ইভেন্টে সোনা জিতলেও একটা কথা ছিল
ইটালি কথা তুলেছিল এই রিফিউজিরাই দায়ী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য
ব্রিটিশরা তো তার দেশে কিছু হলেই সোজা আঙুল তুলে এই রিফিউজিদের দিকে
যারা গুলির ভয়ে তাদের দেশ থেকে আরেক দেশ পাড়ি দিয়েছিল, তারাই আজকে বিশ্ব অলিম্পিকে সব দেশকে ছাড়িয়ে শুটিং এ সোনা জিতছে
আরও অবাক ব্যাপার, সেই শুটিং এ আবার রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ জিতেছে ইতালি এবং ব্রিটেন :P
ব্যাপারটা আমাকে ভয়ংকর রকম আনন্দ দিচ্ছে
“দেশের পতাকা বিহীন” দলের আরেকজন মেয়ে হলো য়ুসরা মর্দিনি ... ২০জনের দলে গাদাগাদি করে নৌকায় চড়ে তুরস্ক থেকে গ্রিস পাড়ি দেন য়ুসরা ও তাঁর বোন সারা ... সামনে অথৈ ভূমধ্যসাগর... নৌকার ধারণ ক্ষমতা খুব বেশি হলে ৭, লোক উঠেছে তার ৩গুণ... উত্তাল মাঝ সমুদ্রে তাদের নৌকা প্রায় ডুবেই যায় যায়
নৌকায় ভয়ার্ত সব মুখের মধ্যে কোনওক্রমে বসে থাকা দামাস্কাসের ১৮ বছর বয়সী এই তরুণী ঠিক করেন, জীবনের সঙ্গে আরও একহাত বাজি লড়বেন তিনি... বোন সারাও তুখোড় সাঁতাড়ু
জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই বোন শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন নৌকাকে... এক হাতে নৌকার সঙ্গে আটকানো দড়ি ধরে থাকা আর অন্য হাত ও দুই পায়ের সাহায্যে বরফ ঠান্ডা থই থই জলে ৩ ঘণ্টার সাঁতার... ২০ জনের প্রাণ বাঁচিয়ে এভাবেই পৌঁছে যায় গ্রিসের উপকূলে
সেই য়ুসরা মর্দিনি আজকে “দেশবিহীন পতাকা দলের” হয়ে ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ও ফ্রিস্টাইলে সুপার হিট সাতারু
ছোটবেলায় রচনায় আমাদের একটা কমন লাইন ছিল, “বিশ্বের ভাতৃত্ববোধ রক্ষা করার জন্য অলিম্পিক গেইমসের সূচনা হয়েছিল...”
পরে ভাবতাম... কেমনে কি... এটা তো সিমপ্লি একটা ‘ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস ডে’ ... ভাতৃত্ববোধ কেমনে আসলো? এটা তো কম্পিটিশান
আজকে ... আজকে প্রায় ২০ বছর পরে এসে সেই ছোটবেলার রচনায় লিখে আসা লাইনটার সাফল্য খুঁজে পেলাম