খালেদা জিয়া দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন : প্রধানমন্ত্রী
মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ আসে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মাথাচারা দিয়ে উঠে। তারা সন্ত্রাস, দুর্নীতি ছাড়া কিছুই দিতে পারে না। তারা লাশ উপহার দেয়, মানুষের হাত ও পায়ের রগ কেটে নেয়। অন্যের জমি জোরপূর্বক দখল করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। মানুষ শান্তি পায়। আমরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। আমরা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করেছি। তিনি গতকাল বিকালে গাজীপুরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর থেকে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আমরা শুনতে পাচ্ছি বিএনপি নাকি ওইদিন থেকে আবারো হরতাল ডাকবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে হরতালের মতো কর্মসূচি না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অনুরোধ করব, পরীক্ষার সময় নষ্ট করবেন না। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখছে, মানুষের মতো মানুষ হবে। আজকের শিশুরাই আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী হবে- এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা বলেন, জানি না তিনি (খালেদা জিয়া) কথা রাখবেন কিনা। তিনি ‘না’ ছাড়া আর কিছুই বলতে জানেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী লেখাপড়া পছন্দ করেন না বলেই পরীক্ষা এলে হরতাল দিয়ে তা বন্ধ করেন। এর একটা কারণ আছে। উনি একবার মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বাংলা, উর্দু আর অংক ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন। উনি ভাবেন নিজে যখন পারেন নাই, ছেলেমেয়েরা কেন পাস করবে।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক এমপি’র সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, জাহানারা বেগম এমপি, নাজমা আক্তার এমপি, অধ্যাপিকা অপু উকিল এমপি প্রমুখ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান সভা পরিচালনা করেন।
বেলা ৩টার দিকে হেলিকপ্টারে করে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হেলিপ্যাডে পৌঁছানোর পর সড়ক পথে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক স্লোগান দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে জনতার শুভেচ্ছার জবাব দেন।
বর্তমান সরকারের সময়ে সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন করবে। বিএনপি নেত্রী আন্দোলন করছেন কেন? উনি ভেবে দেখলেন ভোট চুরি করতে পারবেন না। তাই তালগোল পাকাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী তার ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় দুই নেত্রীর টেলি আলাপনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। তিনি তার সহকারীর মাধ্যমে জবাব দিলেন রাত নয়টার আগে ফোন ধরতে পারবেন না। যার তৈরি হতে রাত নয়টা বাজে তিনি দেশ চালাবেন কিভাবে? তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আমি মোবাইলে তাকে আলোচনার অনুরোধ জানিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালাম। কিন্তু তিনি আমার অনুরোধ রাখলেন না। তিনি হরতাল প্রত্যাহার করলেন না। তিনি কথার বরখেলাপ করলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিরোধীদলীয় নেতা দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে সে বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া দেশের উন্নয়ন চান না। তিনি হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ চান। এ জন্যই তিনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তার ছেলে ও মন্ত্রীকে দিয়ে গ্রেনেড হামলা চালালেন। আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এ হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছিল।